হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
কাজ শেষ না হতেই দেবে গেলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা বাজার খেয়াঘাটের তিস্তার শাখা নদীর উপর নির্মিত কাঁঠের ব্রিজটি। উপজেলার বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরবাসির স্বপ্ন যেন স্বপ্নই থেকে গেল। উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নকশায় নির্মাণাধীন ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দের এডিবির প্রকল্পটি এখন বানের পানিতে ভাসছে। তিস্তায় হঠাৎ বন্যার কারেণে গত এক সপ্তাহ হতে ব্রিজটির ওপর দিয়ে পথচরীগণ চলাচল করছিল। রোববার সকালে ব্রিজটির চারটি খুঁটি দেবে যায়। ব্রিজটি পথচারীদের চলাচল জন্য এখন সম্পূর্ণরুপে ঝুঁকিপূর্ণ দাবি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আ্ব্দুল মান্নাফের।
অনিয়মের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ব্রিজটির নির্মাণ কাজ। কাগজপত্র এবং তথ্যের ভিত্ত্বিতে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩০ জুন ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অথচ রহস্যজনক কারণে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদার সাগীর খান। কংক্রিটের খূুঁটির উপর কাঁঠের পাটাতন বসানো হলেও এখন পর্যন্ত রেলিং দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে তিস্তা নদীতে বন্যার পানির আশাতে ব্রিজটির মাঝখানের চারটি খুঁটি দেবে গিয়ে ব্রিজটি ভেঙে পরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় হাজার পথচারী তিস্তার এই শাখা নদীতে নৌকা দিয়ে বন্যার সময় চলাচল করত। চরবাসির দাবি বাস্তবায়নে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের জোর সুপারিশের ভিত্ত্বিতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের এডিবি ও রাজস্বখ্যাত হতে কংক্রিটের খুঁটির উপর কাঁঠের ব্রিজ নির্মাণের জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন উপজেলা পরিষদ।
বেলকা চরের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ায় আমরা চরের শিক্ষার্থীগণ অনেক খুশী হয়েছিলাম। কিন্তু বিধিবাম, নির্মাণ হতে না হতেই তা দেবে ভেঙে গেল। এখন আবারও সেই নৌকা দিয়ে পার হতে হবে।
হরিপুর চরের স্কুল শিক্ষক আব্দুল জলিল মিয়ার জানান, ব্রিজটির নির্মাণ কাজ দেখে অনেক আশাবাদী ছিলাম চলতি বছরে আর নৌকা দিয়ে পার হতে হবে না। সেটি হল না, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও স্টিমিট প্লান মোতাবেক কাজটি না করায় বন্যার পানিতে খুঁটি দেবে গিয়ে তা ভেঙে গেল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে ব্রিজটির এই অবস্থা দাবী চরবাসির।
ঠিকাদার সাগীর খানের বলেন, এই প্রকল্পটির মুল ঠিকাদার গাইবান্ধার ছানা মিয়া। সাব-ঠিকাদার হিসেবে সে এই কাজটি শুরু করে। কাজ শেষ না হতেই বন্যা শুরু হয়। তিস্তার নদীতে খরস্রোতের কারণে খুঁটির নিচ হতে মাটে সরে গিয়ে খুঁটি দেবে যায়। স্টিমিট প্লান মোতাবেক কাজ করা হয়েছে। এই মহুত্বে অনেক পানি কিছু করার নেই। ইঞ্জিনিয়ারের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নাফ শুরুতেই দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এটি তার আমলের নয়। তিনি সবেমাত্র যোগদান করেছেন। তার দাবি স্টিমিট প্লানটি ভুল ছিল। তিস্তার শাখানদীর ওপর কাঁঠের ব্রিজ নির্মাণের জন্য যেভাবে ডিজাইন করার দরকার ছিল সেটি করা হয়নি। এই মহুত্বে কিছু করার নাই। তবে ব্রিজটির ওপর দিয়ে পথচারীদের চলাচল সম্পুর্ণরুপে বন্ধ রাখতে হবে। কারণ এটি এখন অত্যন্ত ঝুঁকিসম্পূর্ণ।
বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, দুর্ভোগ লাঘবে কাজটি শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোনো কথাই শোনেন না। এই মুহূর্তে ব্রিজটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার প্রায় কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ আবার বেড়ে গেল। তিনি আরও জানান, এটা দুঃখজনক। সরকারি অর্থের অপচয় করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. তরিকুল ইসলামের জানান, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। ব্রিজটি এমন দশার জন্য কে দায়ী, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।