নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রযুক্তি মানবসভ্যতার নিকট বিজ্ঞানের এমন এক আশীর্বাদ, যাহাকে কাজে লাগাইয়া বিভিন্ন অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হইতেছে। বর্তমানে এই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী মানবজীবনের এক অপরিহার্য উপাদান হইয়া উঠিয়াছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব জুড়িয়া যেমন অভাবনীয় পরিবর্তন আনিয়াছে, তেমনি বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে অসামান্য অবদান রাখিতেছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিপুল জনসংখ্যাবিশিষ্ট ছোট একটি দেশ হিসাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সহিত তাল মিলাইয়া বাংলাদেশ যে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন করিয়াছে, তাহা কোনোভাবেই অবহেলা করিবার মতো নহে।দেশে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা বর্তমানে পুরাপুরি দৃশ্যমান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হইতে শুরু করিয়া চিকিত্সা, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, সংস্কৃতিসহ প্রতিটি মৌলিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী বিপ্লব আনিয়াছে। গত এক দশকের ব্যবধানে প্রযুক্তির জাদু শহরের পাশাপাশি স্পর্শ করিয়াছে আবহমান বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদকেও। ইন্টারনেটের কল্যাণে পুরা বিশ্বের সহিত বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলের সংযোগ সাধন করা সম্ভব হইয়াছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল হইতে মানুষ ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে তাত্ক্ষণিক যোগাযোগ রাখিতে পারিতেছে। বাংলাদেশে বসিয়া উন্নত বিশ্বের সহিত রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ এক যুগ পূর্বেও মানুষের কল্পনার বাহিরে ছিল, যাহা আজ বাস্তব রূপ ধারণ করিয়াছে।
বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক—এই তিন জন ব্যক্তির অসামান্য অবদান রহিয়াছে। তাহাদের পরিকল্পনার পাশাপাশি তরুণদের নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হইয়াছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্টের মাধ্যমে দেশে কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথ প্রশস্ত হইয়াছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ হিসাবে সরকারিভাবে বেসিক কম্পিউটার, গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মতো নানা কাজ শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হইয়াছে।
দেশে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা গত এক দশক হইতেই দৃশ্যমান। ইতিমধ্যে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর নিকট বাংলাদেশকে লইয়া গিয়াছে অন্যরকম উচ্চতায়। বাংলাদেশ প্রযুক্তি বিশ্বে অর্জন করিয়াছে একটি সম্মানজনক স্থান। সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের নাম হইতেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসাবে অগ্রযাত্রা শুরু। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার সহিত মানুষের জীবনেও ইহার বড় প্রভাব দেখা যাইতেছে। জনজীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আসিয়াছে উবার-পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ায়। এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান যেমন বাড়িয়াছে, তেমনি অনেকের যাতায়াতেও সুবিধা হইয়াছে। কম্পিউটার ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারী বাড়িবার কারণে নতুন উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হইয়াছে। যেই দেশের মানুষের একসময় নানাবিধ রোগ-ব্যাধির সহিত লড়াই করিবার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির জন্য সংগ্রাম করিতে হইত, সেই দেশের মানুষ এখন উন্নত বিশ্বের মতোই প্রযুক্তির ব্যবহারে আধুনিক জীবন যাপন করিতে পারিতেছে।সামগ্রিকভাবে নানা বিষয়ে দুর্বলতা থাকিলেও সকল মিলাইয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা এখন একটি প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা। ইহার পর এখন শুরু হইয়াছে স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রা। নাগরিক সেবার মানোন্নয়নে বর্তমান সরকার গৃহীত সামগ্রিক সেবাদান প্রক্রিয়া গতি আনিয়াছে। সেই দিন আর অধিক দূরে নহে, যেই দিন বাংলাদেশ সত্যিকারের ডিজিটাল রাষ্ট্র হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতার হইতে এক ধাপ আগাইয়া উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করিবে এবং আমরা হইব সেই গর্বিত রাষ্ট্রের নাগরিক।